মঙ্গলবার, ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১২:২০

শিরোনাম :
কথা দিচ্ছি আপনাদের সেবায় আমি সর্বদা পাশে থাকবো : চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম জাকির হোসেন উপজেলার উন্নয়নে আপনাদের পাশে আমি সর্বদা রয়েছি -ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিন মোটরসাইকেল প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা, আহত-২ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া কে এই জাকির হোসেন প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম যারা আমার জন্য কাজ করেছে আমি তাদের রেখে কখনো পালিয়ে যাইনি-এসএম জাকির হোসেন রেমিটেন্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের ২ দিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন সম্পন্ন সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ
বরিশাল-৬ আসনে রত্না আমিনকে নয়, নৌকার প্রার্থী চায় আ’লীগ

বরিশাল-৬ আসনে রত্না আমিনকে নয়, নৌকার প্রার্থী চায় আ’লীগ

dynamic-sidebar

অনলাইন ডেস্ক// জাতীয় পার্টির মহাসচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাজোটের ওপর ভর করেই বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসন থেকে এমপি হন নাসরিন জাহান রত্না আমিন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিবিহীন নির্বাচনে এমপি হওয়ার পর দীর্ঘ ৫ বছরেও এলাকায় কোনো জায়গাই তৈরি করতে পারেননি রত্না। বিদ্যমান বাস্তবতায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও মহাজোট নেতাকর্মীরা রত্না আমিনকে এমপি হিসেবে চাচ্ছেন না।

স্বামী রুহুল আমিনের বদৌলতে এমপি হওয়ার পর অনেক সম্পদের মালিকও বনে গেছেন রত্না। মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে তার আয় বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।

বরিশাল-৬ আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, ‘এটা দুঃখজনক যে বাকেরগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হওয়ার পরও আসনটি অন্যদের ছেড়ে দিতে হচ্ছে। তাও যদি এমন কেউ হতো যিনি ভোটের মাঠের শক্তিশালী।’

আক্ষেপ করে পটুয়াখালী সদর উপজেলার চেয়ারমান অ্যাডভোকেট তারিকুজ্জামান মনি বলেন, ‘জীবনে কোনো দিন দেখলাম না যে রুহুল আমিন পটুয়াখালীতে রাজনীতি করেছেন।

অথচ উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো এখানে আওয়ামী লীগের কাঁধে চড়ে এমপি হয়ে গেলেন। তবে আল্লাহর অসীম রহমত যে এবার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তার। এ ঘটনায় পটুয়াখালী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও ভোটাররা যে কত খুশি হয়েছে, তা বলে বোঝানো যাবে না।’

মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগে সোমবার মহাসচিবের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া রুহুল আমিন হাওলাদারের এলাকা ছিল বরিশাল-৬। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে এ আসন থেকেই এমপি হন তিনি।

তবে নব্বইয়ের পর ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত কোনো ভোটেই জিততে পারেননি রুহুল আমিন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অংশ হিসেবে রুহুল আমিন এমপি হন। তখন কোনো প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে রুহুল আমিন বিজয়ী হন। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ার মতো জনসমর্থনও নেই তার।’

এমপি হওয়ার পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব হওয়ার সুবাদে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকার পরও রত্নাকে প্রতিষ্ঠিত করতে মাঠে নামেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রথমে তাকে বাকেরগঞ্জ পৌর মেয়র করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই রত্নাকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি করেন। একই সঙ্গে দুই পদে থাকা অবৈধ হলেও দুটি পদই আঁকড়ে থাকেন রত্না।

২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আরও এক ধাপ এগিয়ে রত্না আমিনকে বাকেরগঞ্জের এমপি বানিয়ে নিজে চলে যান পটুয়াখালী-১ আসনে। অথচ দুটি আসনই ছিল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। রুহুল-রত্নার মনোনয়নের বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থান নিলেও শেষ পর্যন্ত সব ভেস্তে যায়।

রত্না আমিনকে নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের যন্ত্রণার শেষ নেই। তাছাড়া বরিশাল-৬ আসনে আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী প্রার্থী থাকার পরও তাদের কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি এবার।

এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রত্নার মনোনয়নপত্রও বৈধ হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নৌকার দাবিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সোচ্চার হওয়ায় তারা এখন বিকল্প হিসেবে জাসদের (ইনু) প্রার্থী মো. মোহসিনকে নিয়ে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও দুর্গাপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ তালুকদার বলেন, ‘এটা কেমন কথা? রুহুল আমিন তার স্ত্রীকে ডামি হিসেবে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।

গত ৫ বছর দেখেছি। এলাকায় কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি রত্না। তাকে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। এমনকি ঢাকা গিয়েও তার দেখা পায়নি এলাকার মানুষ।’ দুধল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা এমপি চাই, যাকে দিয়ে এলাকার উন্নয়ন হবে। পটে আঁকা বিবি দিয়ে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।’

চরাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মল্লিক বলেন, ‘অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে আর কত? টানা ১০ বছর এখানে বঞ্চিত আওয়ামী লীগ। এলাকায় দলের ১ ডজনেরও বেশি নেতা আছেন যারা এমপি হওয়ার যোগ্য। অথচ যে রত্না এলাকার ১৪টি ইউনিয়নের ওয়ার্ডগুলোর নামও ঠিকভাবে বলতে পারবেন কি না সন্দেহ, তাকেই এমপি হিসেবে মানতে হচ্ছে।’

কেবল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরোধিতার মুখেই নয়, গত ৫ বছরে তার সম্পদ বৃদ্ধি নিয়েও বিতর্কের মুখে পড়েছেন রত্না আমিন। এমপি হওয়ার পর গত ৫ বছরে তার বার্ষিক আয় প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে। অস্থাবর সম্পত্তিও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

২০১৪ সালে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় বার্ষিক আয় ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪০ টাকা দেখিয়েছিলেন তিনি। এবারের হলফনামার তথ্য বলছে, এখন তার বার্ষিক আয় ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯৬ টাকা।

অস্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে ২০১৪ সালে ১০০ ভরি সোনা ও ৭২ লাখ ২ হাজার ৩৪০ টাকার হিসাব দাখিল করা রত্না এবার জমা দিয়েছেন ১ কোটি ৯৩ লাখ ২৭ হাজার ২৯৩ টাকার সম্পদের বর্ণনা। সঙ্গে রয়েছে ১০০ ভরি সোনা।

২০১৪ সালে রত্না কৃষি খাত থেকে ৭ হাজার ৫০০ এবং ভাড়া বাবদ ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা আয় দেখান। এবার ভাড়া বাবদ কোনো আয় না দেখালেও কৃষি খাতে তার আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ টাকা।

২০১৪ সালে ব্যবসাকেন্দ্রিক কোনো আয় না থাকলেও এবার এই খাতে আয় দেখানো হয়েছে ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫০ টাকা। এছাড়া এবার ব্যাংক সুদ বাবদ ৪১ হাজার ৪৪৬ টাকা আয় দেখিয়েছেন তিনি।

অস্থাবর সম্পদ প্রশ্নে ২০১৪ সালে রত্নার নগদ জমা ছিল ১১ লাখ ৪২ হাজার ৬৫০ টাকা। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৬৫ লাখ ২৭ হাজার ১৬২ টাকা। শেয়ার মূল্যমান একই থাকলেও গাড়ির ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এসেছে তার।

২০১৪ সালে যেখানে রত্নার ৫৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩০ টাকা দামের একটি গাড়ি ছিল, সেখানে এখন তার মালিকানায় থাকা ২টি গাড়ির দাম ১ কোটি ২৬ লাখ ৮৫ হাজার ১৩১ টাকা।

এছাড়া গত ৫ বছরে অলংকার, ইলেকট্রিক্যাল এবং সাধারণ আসবাবপত্রের মূল্যমানে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি সদ্য সাবেক জাপা মহাসচিবের স্ত্রীর। বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বলেন, ‘১১ লাখ টাকার বার্ষিক আয়ে প্রায় সোয়া কোটি টাকা দামের গাড়ি কীভাবে মেনটেইন হয়, সেটাই তো বড় প্রশ্ন। আমি মনে করি, সবকিছু খতিয়ে দেখা দরকার।’

বন বিভাগের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন হাওলাদার : পটুয়াখালী (দ.) প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনী হলফনামায় পটুয়াখালী বন বিভাগের মামলাটি গোপন করায় ফেঁসে যাচ্ছেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি।

২০১৭ সালে পটুয়াখালী বন বিভাগের ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৬৯৯ টাকার ওই মামলাটির কথা হলফনামায় উল্লেখ করেননি তিনি। শহরের টাউন কালিকাপুর এলাকার আবুল কালাম মৃধা রোববার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করলে তথ্যটি বেরিয়ে আসে।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় পার্টির শাসনামলে রুহুল আমিন হাওলাদার কৃষি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন পটুয়াখালী বন বিভাগের সরকারি ‘বন তাপসী’ নামের একটি লঞ্চ তিনি অবৈধভাবে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে ক্ষতিসাধন করেন। পরবর্তী সময়ে বন বিভাগ ক্ষতিপূরণ বাবদ তার কাছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৬৯৯ টাকা ধার্য করে।

ওই টাকা না দেয়ায় বন বিভাগ ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে আদালতে একটি সার্টিফিকেট মামলা করে, যা বর্তমানে চলমান এবং মামলার পরবর্তী তারিখ আছে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি।

ঋণখেলাপির অভিযোগে এরই মধ্যে হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net